আনন্দবাজার পত্রিকা ১৫ মাঘ ১৪১৭ শনিবার ২৯ জানুয়ারি ২০১১
দক্ষিণ কলকাতা: গড়িয়া, সোনারপুর
দমকল কেন্দ্র
সুরক্ষা সুদূর
দেবাশিস দাস
নগরায়ণের ফলে লোকসংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে বহুতল ও শিল্পসংস্থার সংখ্যাও। কিন্তু এখনও গড়ে ওঠেনি অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা। ফলে নির্ভর করতে হচ্ছে অন্য এলাকার দমকল কেন্দ্রের উপরে। রাজপুর-সোনারপুরের বাসিন্দাদের আশঙ্কা, আগুন লাগলে বড় বিপদ ঘটতে পারে। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
বোয়ালিয়া থেকে রানিয়া এবং গড়িয়া থেকে গোবিন্দপুর পর্যন্ত বিস্তৃত রাজপুর-সোনারপুরে আজও কোনও দমকল কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। এলাকায় দিনের পরে দিন বহুতলের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে নানা সংস্থার অফিস ও শিল্পকেন্দ্র। এলাকার বাসিন্দা রণজিৎ রায়ের কথায়: ‘‘উন্নয়ন নিয়ে অনেক কথা শুনলেও দমকল কেন্দ্র নির্মাণের দাবি কারও মুখে শুনিনি।”
এই অঞ্চল অগ্নিনির্বাপণের জন্য মূলত বারুইপুরের ফুলতলা, বৈষ্ণবঘাটা পাটুলি এবং নাকতলা সংলগ্ন খানপুর— এই তিনটি কেন্দ্রের উপরে নির্ভরশীল। দমকল দফতর সূত্রে খবর, এই তিনটি কেন্দ্রে দু’টি করে ইঞ্জিন থাকে। তাদের পক্ষে এত বড় এলাকায় কাজ চালানো মুশকিল। তা ছাড়া এই সব কেন্দ্রে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মীর সংখ্যা কম।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, দমকল কেন্দ্র না থাকায় ঝুঁকির মধ্যে বাস করতে হচ্ছে। প্রশাসনের উদ্যোগের অভাব রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা চয়ন সেন বলেন, “এলাকায় আগে অনেক জলাশয় ছিল। লোকসংখ্যাও কম ছিল। এখন জনবসতি দ্রুত বাড়ছে। জলাশয়ও কমছে। তাই এলাকায় একটি দমকল কেন্দ্রের খুব প্রয়োজন।” এলাকাবাসীর দাবিকে সমর্থন করে সিপিএম বিধায়ক শ্যামল নস্কর বলেন, “এলাকায় দমকল কেন্দ্রের দাবি বিধানসভায় একাধিক বার জানিয়েছি। আবার জানাব।”
কিন্তু এত দিনেও কেন দমকল কেন্দ্র তৈরি হয়নি?
দমকল সূত্রের খবর, দমকল কেন্দ্র তৈরির জন্য ন্যূনতম ৪০.৪০ একর জমির প্রয়োজন। এই জমিটি খাস হলে সুবিধে হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজ্য দমকল দফতরের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক বলেন, “এই জমিটি খুঁজে দেওয়ার দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসনের। জমি পাওয়ার পরে দফতর দমকল কেন্দ্র নির্মাণে উদ্যোগী হতে পারে। তবে জমিটি এমন জায়গায় হতে হবে যাতে সহজে এলাকার সর্বত্র পৌঁছনো যায়।” রাজ্য দমকল দফতরের অধিকর্তা গোপাল ভট্টাচার্য বলেন, “প্রশাসন যে জায়গায় জমির ব্যবস্থা করে আমরা সেখানেই দমকল কেন্দ্র নির্মাণ করি।”
তবে এ ক্ষেত্রে জমির সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছেন রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার বর্তমান এবং প্রাক্তন চেয়ারম্যান। বর্তমান চেয়ারম্যান তৃণমূলের ইন্দুভূষণ ভট্টাচার্য বলেন, “জায়গা কোনও সমস্যা নয়। প্রয়োজনে পুরসভা আরও সাহায্য করতে পারে।” প্রাক্তন চেয়ারম্যান সিপিএমের কমল গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমার সময় এক বার চেষ্টা করেছিলাম। তখন বারুইপুরের ফুলতলায় হয়। তবে জমি কোনও সমস্যা নয়।”
এলাকার সিপিআই নেতা তড়িৎ চক্রবর্তী বলেন, “রাজপুর-সোনারপুরে দমকল কেন্দ্র নির্মাণের বিষয়টিকে কোনও দিন গুরুত্বের সঙ্গে বিচার করা হয়নি।” রাজপুর-সোনারপুর পুরসভা ব্লক কংগ্রেস সভাপতি রবীন করের কথায়: “আগুন লাগলে ভয়াবহ অবস্থা হয়। বর্তমান চেয়ারম্যানকে সমস্যার কথা জানিয়েছি।” গোটা সমস্যার কথা জেনে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সভাধিপতি তৃণমূলের শামিমা শেখ বলেন, “এই বিষয়ে স্থানীয় পুরসভা বা পঞ্চায়েত জেলা পরিষদকে জানাবে। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।”
No comments:
Post a Comment