Thursday, April 21, 2011

আনন্দবাজার পত্রিকা বলছে- রাজপুর সোনারপুর পৌরসভায় উধাও উন্নয়ন:শুধু স্রোতে ভাসা


আনন্দবাজার পত্রিকা, ৩ পৌষ ১৪১৬ শনিবার ১৯ ডিসেম্বর ২০০৯



দক্ষিণ কলকাতা: গড়িয়া
উধাও উন্নয়ন
শুধু স্রোতে ভাসা
শুভাশিস ঘটক
http://www.anandabazar.com/archive/1091219/19kolg1-1.jpg
রাস্তা ফুটিফাটা। নিকাশি নালা উপচে পড়ছে নোংরা। এলাকায় ব্লিচিং ছড়ানোর লোক নেই। মশার উপদ্রব বেড়ে চললেও পুরসভার কোনও হেলদোল নেই বলে পুরবাসীর অভিযোগ।

ওয়ার্ম আপকিন্তু চলছেই। মাস য়েক পেরিয়ে গেলেও রাজপুর-সোনারপুর পুরসভা কিন্তু এখনও মাঠেই নামতে পারল না। গত জুলাইয়ে কংগ্রেস ও তৃণমূল জোট রাজপুর-সোনারপুর পুরবোর্ড দখল করে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত উন্নয়নের কোনও পরিকল্পনাই তৈরি হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

পুরসভার পরিকল্পনা সহায়ক বোর্ড মিটিংয়ের সংখ্যা একটি, যা প্রতি মাসেই নিয়মিত হওয়া উচিত। ওই মাসিক অধিবেশনে পুর এলাকার উন্নয়নের কর্মসূচি তৈরি করা হয়। কিন্তু এ পর্যন্ত একটি বাজেট অধিবেশন ও একটি বোর্ড মিটিং হয়েছে। প্রায় ছমাস পেরিয়ে গেলেও পুরসভার ৩৫টি ওয়ার্ডের একটিতেও ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হয়নি।

http://www.anandabazar.com/archive/1091219/19kolg1-2.jpg

আগের বামফ্রন্ট বোর্ডের আমলে শুরু হওয়া কাজকর্মও থমকে গিয়েছে। কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে উন্নয়নের কাজ। কয়েকটি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কাজ শেষ করার পরেও ঠিকাদারেরা বরাদ্দ অর্থ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, আগের বোর্ডের হিসেব-নিকেশ স্পষ্ট নয়। ওই হিসেব পরিষ্কার না হলে ঠিকাদারদের বরাদ্দ অর্থ দেওয়া নিয়ে সমস্যা হচ্ছে বলে পুরসভার প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে। যদিও পুর-চেয়ারম্যান ইন্দুভূষণ ভট্টাচার্য বলেন, “বকেয়া বরাদ্দ অর্ধেক দেওয়া হয়েছে। বাকিটাও শীঘ্রই মিটিয়ে দেওয়া হবে।

রাস্তা-নিকাশি-বিদ্যুকোনও ক্ষেত্রেই নতুন কোনও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি বলে বিরোধী সিপিএমের অভিযোগ। শুধু ২ নম্বর ওয়ার্ডেই ১৩টি টিউবওয়েল অনুমোদন করা হয়েছে। কিন্তু বাকি ওয়ার্ডগুলিতে টিউবওয়েলের অনুমোদন দেওয়া নিয়ে কাউন্সিলরদের মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। শুধু ২ নম্বর ওয়ার্ডেই কেন ১৩টি টিউবওয়েলের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে? জবাবে চেয়ারম্যানের মন্তব্য: যা করা হয়েছে জনগণের স্বার্থেই হয়েছে।পাশাপাশি, নোদাখালি থেকে আর্সেনিকমুক্ত জল সরবরাহ প্রকল্পও মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ সম্পূর্ণ বন্ধ আছে। তা ছাড়া পুরসভার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদও খালি রয়েছে। ওই পদেও কোনও নিয়োগ হয়নি। বৃহ আবাসনের নকশা ছাড়া ছোট বাড়ির কোনও নকশা অনুমোদন হচ্ছে না অভিযোগ উঠেছে।

পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও বিরোধী নেতা সিপিএমের কমল গঙ্গোপাধ্যায় অভিযোগ করে বলেন, “কোনও কিছুই নিয়ম অনুযায়ী হচ্ছে না। বস্তুত, কী ভাবে পুরসভা পরিচালনা করতে হবে তাই বোধ হয় কেউ বুঝে উঠতে পারছেন না। নৈরাজ্যের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই পুরসভার পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে।তবে, ধাতস্থ হতে কিছুটা সময় যে লাগবে তা স্বীকার করেন চেয়ারম্যান। তাঁর দাবি: আমরা সব কিছুই পরিকল্পনা করছি। উন্নয়নের কাজ সঠিক পথেই এগোচ্ছে।

http://www.anandabazar.com/archive/1091219/19kolg1-3.jpg

৩৫টি ওয়ার্ডের কোনওটিতেই ওয়ার্ড কমিটি গঠন না হওয়ায় উন্নয়নমূলক কোনও কাজ শুরু করা যাচ্ছে না বলে পুরকর্তাদের একাংশের বক্তব্য। ওয়ার্ড কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করার পরই বিভিন্ন প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়াটা নিয়ম। তা ছাড়া উন্নয়নমূলক কাজ কী ভাবে কতটা হচ্ছে ওয়ার্ড কমিটির সদস্যরাই তা পর্যবেক্ষণ করেন।
পুর-পরিষেবার বেহাল চিত্রও ফুটে উঠেছে চার দিকে। ডিসেম্বর থেকে মার্চএই সময়ই উন্নয়নের কাজের উপযুক্ত সময়। রাস্তা থেকে নিকাশিনালা সংস্কার এই সময়ের মধ্যে করাটাই উপযুক্ত সময় বলে মনে করেন পুর বাস্তুকারদের একাংশ। কিন্তু কোনও পরিকল্পনা না হওয়ায় উন্নয়ন থমকে রয়েছে।

নিকাশি সমস্যায় জর্জরিত পুর এলাকায় নিকাশি নালা পরিষ্কার থেকে আরম্ভ করে নতুন নিকাশি পথসব কাজই শিকেয় উঠেছে বলে পুরবাসীদের অভিযোগ। তাঁদের অভিযোগ, বতর্মান পুরবোর্ড বিদ্যু ব্যবস্থার উন্নতির জন্য কোনও পরিকল্পনাই করেনি। সোনারপুর ও রাজপুরের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় ভেপার ল্যাম্প অকেজো হয়ে পড়ে আছে। তা বদল করা হয়নি। মাস ছয়েক কোনও পরিষেবামূলক কাজ না হওয়ায় রাজ্য সরকারের কয়েকটি অনুদানও হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে বলে পুরসভা সূত্রে খবর। কিন্তু কেন এই অবস্থা? চেয়ারম্যান ইন্দুভূষণ ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা সবে শুরু করেছি। এক দিনে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু করা হচ্ছে।

No comments:

Post a Comment