আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৭ পৌষ ১৪১৬ শনিবার ২ জানুয়ারি ২০১০
দক্ষিণ কলকাতা: গড়িয়া, সোনারপুর
বাজারে গ্রহণ
দেবাশিস দাস
সোনারপুর জংশনের পাশে এই সোনারপুর বাজারের নিয়মিত ক্রেতাদের অধিকাংশকেই এখন আর মূল বাজার পর্যন্ত যেতে হয় না। কারণ, মূল বাজারকে কেন্দ্র করে বাইরের রাস্তায় গজিয়ে উঠেছে আরও একটা বাজার, যেখানে শাক-সব্জি, তরিতরকারি, চাল, মাছ-সহ সব কিছুই পাওয়া যায়। মূল বাজারকে ঘিরে বহু জায়গাতেই বাইরে বাজার বসে, কিন্তু এখানে পরিস্থিতি কার্যত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দা ও মূল বাজারের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ।
বতর্মানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সোনারপুর স্টেশন সংলগ্ন রাস্তা দখল করে চলা বিকিকিনি, দোকানিদের পসরা, পথচারী, যানবাহন সব মিলেমিশে জগাখিচুড়ি পরিবেশে তিতিবিরক্ত এলাকার মানুষ। বহু দিনের বাসিন্দা প্রবীর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দিনের পর দিন এ ভাবেই চলছে। কেউ কোনও আইন মানে না। যে যেখানে খুশি ঝুড়ি নিয়ে বসে পড়ে।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোনারপুর বাজারের বাইরে যাঁরা পসরা নিয়ে বসতেন, বছর পনেরো আগে তাঁদের অধিকাংশকে সরিয়ে বাজারের ভিতরে আনা হয়েছিল। কিন্তু পরে ধীরে ধীরে বাজারের চারপাশটা আবার দখল হয়ে যায়। মূল বাজারের সব্জি ব্যবসায়ী সমর ঘোষের কথায়: “আমাদের যখন রাস্তা থেকে তুলে এনে বাজারের ভিতরে জায়গা দেওয়া হল তখন কথা দেওয়া হয়েছিল, রাস্তায় কেউ আর বসবে না। কিন্তু এখন দেখছি পেট চালানোই দায়। আমাদের সমস্যাকে কোনও রাজনৈতিক দলই গুরুত্ব দেয় না। পুরপ্রধান থেকে মুখ্যমন্ত্রী, সকলকে আমরা এই সমস্যার কথা জানিয়েছি। কিন্তু কেউ আগ্রহ দেখাননি।” যদিও বাইরে বসা ব্যবসায়ীদের অনেকে বলেন, তাঁরা বহু দিন ধরেই এ ভাবে বসছেন। তাঁদের কোনও দিনই কেউ কিছু বলেননি।
সোনারপুর এলাকার পুরনো এই বাজারে অনেক দিন কোনও সংস্কারের কাজ হয়নি। বাজার কমিটির সদস্য ও নিয়মিত চাঁদা সংগ্রাহক শিবু হালদার বলেন, ‘‘বাজারে প্রায় তিনশো দোকান আছে। কিন্তু বিক্রিবাটা কমে যাওয়ায় তার মধ্যে অনেকে নিয়মিত দোকান খোলেন না। যা চাঁদা ওঠে তা বাজার পরিষ্কার, পাহারা আর বিদ্যুতের বিল মেটাতে চলে যায়। এখনও অবধি যেটুকু কাজ হয়েছে তা সম্ভব হয়েছে বছর তিরিশ আগে তোলা বাজার কমিটির পয়সায়।” আর এক ব্যবসায়ী জয়দেব ঘোষ জানান, কয়েক বছর বাজারের নর্দমা পরিষ্কার করা হয় না। বর্ষার সময় জল জমে এমন অবস্থা হয় যে দোকান খোলা যায় না। বাজারের অধিকাংশ দোকান বেড়া আর টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি। চাল বাজারের একটা অংশ পাকা হলেও তা অর্ধসম্পন্ন। বাজার জুড়ে ইলেকট্রিকের তার ঝুলছে বিপজ্জনক ভাবে। সর্বত্র অযত্নের ছাপ স্পষ্ট। বাজারের ব্যবসায়ীরা চান, পুরসভা বা সরকার এই বাজারটি অধিগ্রহণ করে বাজারের নীচের অংশে ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন দিয়ে বাকি অংশ বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করুক।
সোনারপুর টাউন তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক বাবলা ঘোষ জানান, হঠাৎ দখলদারদের তুলতে গেলে বিক্ষোভ হতে পারে। সমস্যাটি নিয়ে তাঁরা সোনারপুর ব্যবসায়ী কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, রাস্তার পাশে যে নর্দমা রয়েছে তা পার করে কেউ পসরা নিয়ে বসতে পারবেন না। খুব শীঘ্রই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।”
রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নিমাই মণ্ডল বলেন, “বাজারের মালিকানা নিয়ে শরিকি সমস্যা রয়েছে। পুরসভায় বামফ্রন্টের দ্বিতীয় মেয়াদে যখন এই বাজার হস্তান্তরের একটা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল তখন বাজারের উন্নয়নের জন্য টাকাও বরাদ্দ হয়েছিল। কিন্তু জটিলতার জন্য হস্তান্তর প্রক্রিয়া আটকে যায়। বরাদ্দ অর্থ চলে যায় অন্যত্র। এখন যদি সব পক্ষ ইতিবাচক মনোভাব নেয় তবেই সমস্যার সমাধান সম্ভব।”
সোনারপুরের সিপিএম বিধায়ক শ্যামল নস্কর বলেন, “বাজারের সমস্যা নিয়ে সোনারপুর-রাজপুর পুরসভার পুরনো বোর্ড এক বার উদ্যোগী হয়েছিল। কিন্তু পরে আবার হকারদের নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে। সমস্যা সমাধানের পথ পুরসভার নতুন বোর্ডকে করতে হবে। হকারদের সুনির্দিষ্ট জায়গায় পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে রাস্তাটা দখলমুক্ত করা উচিত। এই কাজে পুরসভার নতুন বোর্ডকে সাহায্য করতেও আমি রাজি।” পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান সিপিএমের কমল গঙ্গোপাধ্যায়ও বলেন, “পুরসভার নতুন বোর্ডকেই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে বাজার সমস্যার সমাধান করতে হবে।”
তবে বর্তমান পুর-চেয়ারম্যান ইন্দুভূষণ ভট্টাচার্যের অভিযোগ, সোনারপুর বাজারের বাইরে হকারদের যে সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছে তার পিছনে পুরনো পুরবোর্ডের পরিচালকদের যথেষ্ট মদত ছিল। তিনি বলেন, “আজ যদি আমরা বাজারের রাস্তা থেকে হকারদের তুলতে যাই, তা হলে যাঁরা মুখে সাহায্যের আশ্বাস দিচ্ছেন তাঁরাই সর্বাগ্রে বিরোধিতা করতে এগিয়ে আসবেন। তবে সোনারপুর বাজারের ব্যবসায়ীরা যে অধিগ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছেন তা আমাদের বিবেচনার মধ্যে রয়েছে।”
No comments:
Post a Comment