Thursday, April 21, 2011

‘গরিবের বাড়ি’ প্রকল্পে তৃণমূলী অপদার্থতার নজির রাজপুর-সোনারপুর পৌরসভায়


পৌরসভাতেও তৃণমূল অকর্মণ্য, শিকার সেই গরিব মানুষ

নিজস্ব প্রতিনিধি

কলকাতা, ২০শে জানুয়ারি,২০১০— পঞ্চায়েত পরিচালনায় তৃণমূলের অপদার্থতা ইতোমধ্যেই স্পষ্ট হয়েছে। এবার পর্ব রাজ্যের পৌরসভাগুলির। গরিব পরিবারকে জমি দেওয়া থেকে বাড়ি তৈরি— নগরোন্নয়নের সব কাজে পিছিয়ে পড়ছে তৃণমূল পরিচালিত পৌরসভাগুলি। রাজ্যের পৌর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য এই প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার বলেছেন, ‘‘ক্ষতি হচ্ছে সারা রাজ্যের। তৃণমূল পরিচালিত পৌরসভাগুলির কাজে গতির অভাব পুরো রাজ্যকেই পিছিয়ে দিচ্ছে।’’ কেন তারা পারছে না ? এই প্রশ্নের জবাবে অশোক ভট্টাচার্য বলেন —‘‘আসল অভাব রাজনৈতিক সদিচ্ছার। দৃষ্টিভঙ্গির।’’


রাজ্যে ১২৭টি পৌরসভা। এদিন রাজ্যের ৪৯টি পৌরসভার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপনের প্রক্রিয়ার উদ্বোধন করেন অশোক ভট্টাচার্য। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী ড. দেবেশ দাস। দেবেশ দাস জানান, ‘‘ খুবই কম খরচের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে রাজ্য সরকারের সঙ্গে পৌরসভাগুলির, নগরোন্নয়ন দপ্তরের বিভিন্ন অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হয়ে গেল। বাকি পৌরসভাগুলির সঙ্গেও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই যোগসূত্র তৈরি হবে।’’ 


এদিন আসানসোলের মত অনেকগুলি তৃণমূল পরিচালিত পৌরসভাতেও এই যোগাযোগ স্থাপন করল রাজ্য সরকার। প্রসঙ্গত রাজ্যের ৩৫টি পৌরসভা পরিচালনা করে বামফ্রন্ট। বাকিগুলির অধিকাংশ তৃণমূল পরিচালিত। রাজ্য সরকার যে বিরোধী দল পরিচালিত পৌরসভা সম্পর্কেও যত্নশীল, এদিনের নতুন প্রকল্প উদ্বোধনেই তার চিহ্ন রয়েছে। কিন্তু মমতা ব্যানার্জির নির্দেশে কলকাতা কর্পোরেশনসহ তৃণমূল পরিচালিত পৌরসভাগুলি রাজ্য সরকারের সঙ্গে অসহযোগিতার রাস্তা নিয়েছে। অশোক ভট্টাচার্যের কথায় —‘‘ ঐ পৌরসভাগুলির পরিচালকদের অভিজ্ঞতা কম থাকতে পারে। তাতে কোন দোষ নেই। প্রকল্প প্রণয়নে রাজ্যের পরামর্শ, মতামত, সাহায্য তাদের কাজ করতে সাহায্যই করবে। আমরা সব রকম সহযোগিতা করতে চাই। কিন্তু তাঁরা কোন মতামত নেবে না। ক্ষতি নাগরিকদের হচ্ছে।’’

উদাহরণ হতে পারে কলকাতা। সরকারী জমিতে দীর্ঘদিন বসবাস করছেন এমন লক্ষাধিক গরিব মানুষ রয়েছেন রাজ্যে। রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ১টাকার বদলে ৯৯বছর লিজে ঐ জমি গরিব পরিবারগুলিকে দেওয়া হবে। সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যেক পৌরসভাকে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে তা কার্যকরী করার কাজও শুরু হয়ে গেছে। চন্দ্রকোণা রোড পৌরসভায় ইতোমধ্যেই এই কাজ হয়েছে। আগামী ২৮শে জানুয়ারি মালবাজারে ৫৬০টি পরিবারের হাতে জমির অধিকার তুলে দেওয়া হবে। শিলিগুড়িতে দু দফায় ৯৯০, তুফানগঞ্জে প্রায় ২৪০টি পরিবারকেও কয়েকদিনের মধ্যেই দেওয়া হবে জমির কাগজপত্র। উত্তর দমদম পৌরসভাও তার এলাকায় শতাধিক মানুষকে ঐ প্রকল্পে জমির মালিকানা দিতে আবেদন করেছে। আরো কয়েকটি পৌরসভার আবেদন খতিয়ে দেখছে রাজ্যের ভূমি সংস্কার দপ্তর। কিন্তু সেগুলির প্রত্যেকটিই বামফ্রন্ট পরিচালিত। কলকাতাসহ তৃণমূলের কোন পৌরসভার পক্ষ থেকেই এমন কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কলকাতার বেহালাসহ কিছু এলাকায় এমন অনেক পরিবার আছেন, যাঁরা দীর্ঘদিন সরকারী জমিতে বসবাস করছেন। অশোক ভট্টাচার্য এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘ এমন কোন উদ্যোগ কলকাতা নিচ্ছে না কেন ? এটি তো আমারই প্রশ্ন।’’

তৃণমূলের অপদার্থতার আর একটি উদাহরণ হতে পারে বি এস ইউ পি প্রকল্প। প্রকল্পটির পুরো নাম বেসিক সার্ভিস টু দ্য আরবান পুওর। আর এই ক্ষেত্রে তৃণমূলের অপদার্থতার নজির হতে পারে রাজপুর-সোনারপুর পৌরসভা। ঐ প্রকল্পে রাজপুর-সোনারপুর পৌরসভার ১৭৮৮টি বাড়ি বানানোর কথা। ২০০৯-র জুন মাসে ঐ পৌরসভার নির্বাচনে তৃণমূল জয়ী হয়। তার আগে বামফ্রন্টের বোর্ডের সময়েই ৯০০টি বাড়ির ওয়ার্ক অর্ডার হয়ে গেছিল। কিন্তু তারপর দেড় বছরের বেশি সময় চলে গেছে। কিন্তু কোন বাড়িও তৈরি হয়নি। নতুন কোন বাড়ির ওয়ার্ক অর্ডারও হয়নি। অর্থাৎ কাজের অগ্রগতি শূন্য শতাংশ।

তৃণমূলের একই ‘কর্মতৎপরতা’ দেখা যাচ্ছে উলুবেড়িয়াতেও। সেখানে বামফ্রন্ট বোর্ড পরিচালনাকালীন গরিবের বাড়ি তৈরির দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের অনুমোদন মেলে। মোট ২১০০ বাড়ি তৈরির অনুমোদন দিয়েছিল রাজ্যের নগরোন্নয়ন দপ্তর। ১১০০ বাড়ি তৈরির ওয়ার্ক অর্ডার বামফ্রন্টের বোর্ডই দিয়েছিল। এখানেও ২০০৯-র জুনের নির্বাচনে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট ক্ষমতায় আসে। দেড় বছরের বেশি সময় কেটে গেছে। এর মধ্যে নানা ডামাডোলে জোট ভাঙাগড়া চলেছে উলুবেড়িয়ায়। কাজ উঠেছে শিকেয় — এমনই অভিযোগ শহরবাসীর। তাই এখন পর্যন্ত মাত্র ৪৭টি বাড়ি করতে পেরেছে তৃণমূল পরিচালিত উলুবেড়িয়া পৌরসভা। কাজের অগ্রগতি মাত্র ২শতাংশের সামান্য বেশি। তৃণমূলের এই অপদার্থতা স্পষ্ট এম ই ডি প্রকল্পেও। পুজালি কিংবা বারুইপুর, বজবজ — কোথাও কাজ ২শতাংশের বেশি এগোয়নি। 

এই প্রসঙ্গে এদিনই নগরোন্নয়ন মন্ত্রীর বক্তব্য: ‘‘ ওনাদের (তৃণমূল) মূল লক্ষ্য বিধানসভা নির্বাচন। তাই দক্ষতা বাড়ানোর দিকে আর নজর নেই। কারণ পৌরসভা পরিচালনা করা তাঁদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে না।’’

No comments:

Post a Comment