Friday, April 15, 2011

প্রসঙ্গ সোনারপুর রেল ওভারব্রিজ


আনন্দবাজার পত্রিকা, ১০ পৌষ ১৪১৬ শনিবার ২৬ ডিসেম্বর ২০০৯

দক্ষিণ কলকাতা: গড়িয়া, সোনারপুর
সেই ট্র্যাডিশন

ঝুঁকির পারাপার

দেবাশিস দাস 

দুচাকার যান পারাপারের জন্য রয়েছে আলাদা ওভারব্রিজ। কিন্তু নিজেদের সুবিধার জন্য দিনের অধিকাংশ সময়েই ওই পথ এড়িয়ে চলেন দুচাকার যানের আরোহীরা। আপ অথবা ডাউন লাইনের ট্রেন সোনারপুর জংশনে থামলে যাত্রী, পথচারী এবং মোটরবাইক, স্কুটার, সাইকেল মিলে রেললাইনের উপরেই তীব্র জটের সৃষ্টি হয়। অনেক সময় এই জটে আটকে যায় ট্রেনও।
স্কুটার নিয়ে প্রতি দিন এই পথেই যাতায়াত করেন প্রমিত নস্কর। তিনি বলেন, “পেশার প্রয়োজনে দিনে অন্তত ছবার আমাকে এই পথ দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। ওভারব্রিজের চেয়ে আমার কাছে রেললাইনের উপর দিয়ে যাতায়াত করা অনেক সুবিধাজনক।এই পথে দুচাকার যান নিয়ে যাঁরা নিয়মিত যাতায়াত করেন তাঁদের অধিকাংশই প্রমিতবাবুর মতো রেললাইনের উপর দিয়ে যাতায়াতকেই সুবিধাজনক বলে মনে করেন। মোটরবাইক আরোহী শুকদেব চক্রবর্তীর যুক্তি: ‘‘ওভারব্রিজটি খুব উঁচু। ফলে গাড়ি নিয়ে ওঠানামা করতে সমস্যা হয়। নামার পথটা খুব ঢালু। আর গাড়ি নিয়ে নামার পরে বার হওয়ার পথ খুব সঙ্কীর্ণ। তাই রেললাইন দিয়ে আসা-যাওয়া অনেক সহজ হয়।
সোনারপুর টাউন তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক বাবলা ঘোষ বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর আগে যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন তখন সোনারপুরে এই ওভারব্রিজটি তৈরি করা হয়েছিল। ওভারব্রিজ থেকে নামার পরে বের হওয়ার রাস্তাটার হাল খারাপ। সোনারপুরে রেলের কাজের তদারকির দায়িত্বে যাঁরা আছেন তাঁদের এই সমস্যার কথা জানিয়েছি। তাঁরা সমাধান করার আশ্বাস দিয়েছেন।’’
যাত্রী এবং পথচারীদের পারাপারের সুবিধার জন্য যে ওভারব্রিজ তৈরি করা হয়েছিল তা সারা দিন কার্যত ফাঁকাই পড়ে থাকে। অনেকে এই ওভারব্রিজে ওঠার পথটিতে সাইকেল এবং স্কুটার রেখে চলে যান। ট্রেনের হকাররা অনেক সময় ওভারব্রিজে ওঠার মুখটিতে পণ্যবোঝাই ঝুড়ি জমিয়ে রেখে দেন। ভবঘুরেরা ওভারব্রিজের এখানে-ওখানে শুয়ে থাকেন। ওভারব্রিজ থেকে নামার পরে বাইরে বের হওয়ার পথটি চলে গিয়েছে দোকান এবং হকারদের দখলে। সোনারপুরের বিধায়ক শ্যামল নস্কর বলেন, ‘‘যে সময় এই ওভারব্রিজ তৈরি করা হয়েছিল তখন সোনারপুর রেলযাত্রী সমিতি এবং নাগরিক কমিটির তরফ থেকে রেল দফতরের কাছে রেলগেটে একটি ভূগর্ভস্থ পথ নির্মাণ করার আবেদন জানানো হয়। কিন্তু সেই আবেদনকে কোনও গুরুত্ব না দিয়ে ওভারব্রিজ তৈরি করায় সমস্যার কোনও সমাধান হল না।’’  
বাসিন্দাদের মতে, সোনারপুর রেলগেটের ক্রসিংটি অত্যন্ত বিপজ্জনক। রেললাইনের পশ্চিমে রেলগেট এবং পুবে সোনারপুর বাজার। সঙ্গে স্টেশন থাকায় এই এলাকায় সারা দিন ভিড় থাকে। প্রতি দিন সকাল এবং সন্ধের সময় সবচেয়ে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়। বাসিন্দা প্রতিমা মণ্ডল বললেন, “আমরা ঝুঁকি নিয়েই সব সময় লাইন পারাপার করি। আসলে ওভারব্রিজ দিয়ে যাতায়াত করতে হলে অনেকটা ঘুরতে হয়।

সোনারপুর পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান সিপিএমের কমল গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “রেলগেটে মানুষ যে ভাবে পারাপার করেন তাতে যে কোনও সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ওভারব্রিজের ব্যবহার সর্ম্পকে মানুষকে সচেতন করে তোলার জন্য কিছু কর্মসূচি নিতে পারে পুরসভা। বর্তমান পুর-চেয়ারম্যান তৃণমূলের ইন্দুভূষণ ভট্টাচার্য বলেন, “স্টেশনে যে ওভারব্রিজ রয়েছে তা মানুষ ব্যবহার করবে কি করবে না এই বিষয়ে পুরসভার কিছু করার নেই। তবে রেলগেট এবং স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় রাস্তার কিছু সমস্যা রয়েছে। তা সমাধানের বিষয় নিয়ে পূর্ত দফতরের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে।’’
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সমীর গোস্বামী বলেন, “ওখানকার সমস্যার বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। ইঞ্জিনিয়ার পাঠিয়ে যাত্রীদের অসুবিধার দিকটি খোঁজ নিয়ে দেখব।

No comments:

Post a Comment